কম্পিউটার

বর্তমান প্রযুক্তিতে কম্পিউটারের অবদানের অন্তরালে রয়েছে শতাব্দীর পর শতাব্দী ধরে মানুষের নিরলস পরিশ্রম, উদ্ভাবনী শক্তি ও গবেষনা স্বাক্ষর।
প্রাগৈতিহাসিক যুগে গণনার যন্ত্র উদ্ভাবিত বিভিন্ন কৌশল/ প্রচেষ্টাকে কম্পিউটার ইতিহাস বলা যায়। প্রাচীন কালে মানুষ সংখ্যা বুঝানোর জন্য ঝিনুক, নুড়ি, দড়ির গিট ইত্যাদি ব্যবহার করত। পরবর্তীতে গণনার কাজে বিভিন্ন কৌশল ও যন্ত্র ব্যবহার করে থাকলেও অ্যাবাকাস (Abacus) নামক একটি প্রাচীন গননা যন্ত্রকেই কম্পিউটারের ইতিহাসে প্রথম যন্ত্র হিসেবে ধরা হয়। অর্থাৎ অ্যাবাকাস থেকেই কম্পিউটারের ইতিহাসের শুভযাত্রা। এটি আবিষ্কৃত হয় খ্রিষ্টপূর্ব ২৪০০ সালে ব্যাবিলনে। অ্যাবাকাস ফ্রেমে সাজানো গুটির স্থান পরিবর্তন করে গননা করার যন্ত্র। খ্রিস্টপূর্ব ৪৫০/৫০০ অব্দে মিশরে/ চীনে গননা যন্ত্র হিসেবে অ্যাবাকাস তৈরি হয়।
১৬১৬ সালে স্কটল্যান্ডের গণিতবিদ জন নেপিয়ার (John Napier) গণনা কাজে ছাপা বা দাগ কাটাকাটি/ দন্ড ব্যবহার করেন । এসব দন্ড নেপিয়ার (John Napier) এর অস্থি নামে পরিচিত।
১৬৪২ সারে ১৯ বছর বয়স্ক ফরাসি বিজ্ঞানী ব্লেইজ প্যাসকেল (Blaise Pascal) সর্বপ্রথম যান্ত্রিক ক্যালকুলেটর আবিষ্কার করেন। তিনি দাঁতযুক্ত চাকা বা গিয়ারের সাহায্যে যোগ বিয়োগ করার পদ্ধতি চালু করেন। ১৬৭১ সালের জার্মান গণিতবিদ হটফ্রাইড ভন লিবনিজ (Gottfried Von Leibniz) প্যাসকেলের যন্ত্রের ভিত্তিতে চাকা ও দন্ড ব্যবহার করে গুণ ও ভাগের ক্ষমতাসম্পন্ন আরো উন্নত যান্ত্রিক ক্যালকুলেটর তেরি করেন। তিনি যন্ত্রটির নাম দেন রিকোনিং যন্ত্র (Rechoning Mechine)। যন্ত্রটি তাত্ত্বিক দিক দিয়ে ভাল হলেও যান্ত্রিক অসুবিধার জন্য জনপ্রিয় হয়ে উঠেনি।
পরে ১৮২০ সালে টমাস ডি কোমার (Tomas De Colmar) রিকোনিং যন্ত্রের অসুবিধা দূর করে লিবনিজের যন্ত্রকে জনপ্রিয় করে তোলেন।
উনিশ শতকের শুরুর দিকে আধুনিক একটি যন্ত্রের নির্মাণ ও ব্যবহারের ধারণা (যা কেবলমাত্র যান্ত্রিকভাবে, মানে যেকোনও রকম বুদ্ধিমত্তা ব্যতিরেকে, গাণিতিক হিসাব করতে পারে) প্রথম সোচ্চার ভাবে প্রচার করেন চার্লস ব্যাবেজ। তিনি এটির নাম দেন ডিফারেন্স ইন্জিন (Difference Engine)। এই ডিফারেন্স ইঞ্জিন নিয়ে কাজ করার সময় (১৮৩৩ সালে) তিনি অ্যানালিটিক্যাল ইন্জিন নামে আরও উন্নত ও সর্বজনীন একটি যন্ত্রে ধারনা লাভ করেন। কিন্তু প্রয়োজনীয় যন্ত্র ও অর্থের অভাবে কোনোটির কাজই তিনি শেষ করতে পারেননি।
কম্পিউটার বিজ্ঞানের সত্যিকার সূচনা হয় অ্যালান টুরিং এর প্রথমে তাত্ত্বিক ও পরে ব্যবহারিক গবেষণার মাধ্যমে।

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন